প্রথম আলাপ
-অণুশ্রী দাস
খুব সুন্দর রোদ ঝলমলে একটা দিন ছিল সেদিন,
কলেজের সবুজ কার্পেটের গা বেয়ে দুপুর নামছে একটু করে,
ঘড়ির কাঁটার দৌরাত্বে থেমে এসেছিল সারাদিনের কোলাহল,
পাঁচটায় এক্সট্রা ক্লাস যখন শেষ হল,
বাইরে বেড়িয়ে দেখলাম কৃষ্ণচূড়ার আভায়,
গোধূলি সোহাগে মেতেছে,
তখন রাধার অভিসারী মন কেমনের মতো
অজানা শূন্যতায় ভরেছিল আমার সারাটা বিকেল,
তখনও তোমার সাথে হয়নি আলাপ,
আড়মোড়া ভেঙে যখন সকাল জাগছে,
কুয়াশার চাদরে উষ্ণতা ছুঁয়ে,
তখন আমার আঙুল মেতেছে,
সেতারের হিন্দোল আলাপনে,
সেই মুহূর্তের স্নিগ্ধতায় যখন আমি ভাসছি,
শুদ্ধ সোনার কনায়, সেই আমির সাথেও
তখনও হয়নি তোমার আলাপ
বাইরের ধূসর ঘনঘটা,
শহরজুড়ে যখন অরাজকতা চালাচ্ছে,
আমার মনের আকাশেও তখন তুমুল ধ্বংসের ঝড় উঠেছিল অহেতুক কলঙ্কের দাগে,
তার ঠিক পরই বসন্তের শেষ,
বিভৎস বাস্তবের চোখ রাঙানিতে
নিজেকে যখন গুটিয়ে নিচ্ছি,
আমার সব ভালোলাগা,নিজস্ব মতামতের দাবি বিকিয়ে দিয়েছি সময় স্রোতে
তখন সেই একাকী যন্ত্রণার শেষ মুহূর্তে তোমার সাথে প্রথম আলাপ শুভদৃষ্টির বিনিময়ে,
দিন এগিয়েছে, প্রথম প্রথম হাত ধরার শিহরণ কাটিয়ে,
আজ আমি এক অন্য মানুষ, তোমার সন্তানের মা,
আমার আমি নিঃশেষ হবার ঠিক আগেই,
আগলেছ তুমি ছন্নছাড়া এক শরীরকে,
নতুন করে অঙ্কুরোদ্গমের মতো,
আমার মনে প্রাণ সঞ্চার করেছে ,
তোমার খোলা মনের ছাদ,
আমাদের সেই ঝিঁ ঝিঁ পোকার ডাকে
মোহমায়ায় কাটানো প্রতিটি রাতের সাক্ষী আছে
জ্যোছনায় ঢাকা এক আকাশ তারা।
তোমার সাথে আমার সম্পর্ক,
হলুদ সুতোয় বাঁধা পরার অনেক পর,
বুঝেছি কতটা তুমি আমাকে ভালোবাসো,
কিন্তু, আজ বুঝতে পারছি সেই জ্যোছনা,
এক বাগান ফুলের সুভাষে আমাকে ভরিয়ে রাখা,
কিংবা আমার অন্তঃসত্ত্বার মধ্যে সদা জাগ্রত সুরের মূর্ছনা,
যা কিনা আমি ফেলে এসেছিলাম বহু আগে ,
সেই সুরের জীবনেই আমাকে প্রতিষ্ঠা করা-
এগুলো তোমার সবই নিখুঁত পরিকল্পনা ছিল মাত্র ,
যাতে আমি কষ্ট না পাই তোমার চলে যাওয়া নিয়ে
এসবের মাঝে ব্যস্ত থেকে যেন তোমাকে মনে করারই না সুযোগ পাই,,
কিন্তু আজও মনের প্রতিটা স্কোয়ার ইঞ্চিতে তোমার অভ্যেসের ছাপ,
আমার কানের পাশে ফিসফিসিয়ে কারা যেন বলে চলে তোমার আমার পুরনো সংলাপ,
আজ তো শুধু ধুধু প্রান্তর,
তোমাকে ছুঁতে চাওয়ার দীর্ঘশ্বাসে ,
গালের দুঃখে জমা ঠান্ডা উত্তাপ
জান,এখনও স্বপ্ন দেখে বাঁচি
আবার নতুন করে প্রেমে পড়বে
আমাদের সন্ধ্যে সাঁঝের ‘প্রথম আলাপ’…।।